ঢাকা , বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ , ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ই-পেপার

আদানির বকেয়া নিয়ে চাপে বাংলাদেশ

আপলোড সময় : ০৮-০৯-২০২৪ ১২:৩৬:০৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৮-০৯-২০২৪ ০৫:৫১:৪৮ অপরাহ্ন
আদানির বকেয়া নিয়ে চাপে বাংলাদেশ
বকেয়া জমতে থাকলেও বাংলাদেশকে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আদানি গ্রুপ। তবে সেই সঙ্গে তারা দ্রুত বকেয়া পরিশোধের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এদিকে ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ বিল বাবদ বাংলাদেশের বকেয়ার পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও ডলার সংকটের কারণে তা পরিশোধ করতে পারছে না সোনালী ব্যাংক।

আদানি গ্রুপের কোম্পানি আদানি পাওয়ার ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) বিদ্যুৎ দিচ্ছে। গত বছরের মার্চ থেকে ভারতের ঝাড়খণ্ডের গড্ডায় আদানির ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসছে।

চুক্তির আওতায় এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার সুযোগ থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী এখন প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। সেজন্য প্রতি মাসে আদানির কাছ থেকে ৯০ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বিল পায় পিডিবি।

বিল পরিশোধের জন্য আদানি গ্রুপকে বাংলাদেশ থেকে ডলার পাঠানো হয় সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার নিয়েই তা শোধ করে সোনালী ব্যাংক।

কিন্তু ডলার সংকটের কারণে পুরো ডলার সোনালী ব্যাংক শোধ করতে পারেনি। বিভিন্ন সময়ে আংশিক বিল পরিশোধে বাংলাদেশ থেকে গেছে ৪৭৬ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সর্বশেষ ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন ডলার সোনালী ব্যাংক পাঠিয়েছে।

এই হিসাবে মে পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশের বকেয়া পড়েছে ৬৪৫ মিলিয়ন ডলার। এর সঙ্গে জুন ও জুলাইয়ের বকেয়া হিসাব করলে মোট অঙ্ক ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়।

এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, হ্যাঁ, আমরা সব পেমেন্ট একবারে পরিশোধ করতে পারছি না। পার্শিয়াল পেমেন্ট করে যাচ্ছি।

সোনালী ব্যাংকের এমডি আফজাল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় থেকে যে ডলার আয় হয়, তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারপরও দরকার হলে আন্তঃব্যাংক থেকে ডলার নিয়ে চাহিদা পূরণ করা হয়।

আদানি গ্রুপের বরাত দিয়ে ভারতের ইকোনমিক টাইমসও গত ২৩ অগাস্ট এক প্রতিবেদনে ৮০০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া থাকার কথা বলেছে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের কোনো পরিকল্পনা আদানি পাওয়ারের না থাকলেও বকেয়া এভাবে বাড়তে থাকলে ঋণদাতা ও কয়লা সরবরাহকারীদের বিল শোধের চাপে পড়বে ভারতীয় এ কোম্পানি। সে কারণে তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে।

আদানি গ্রুপের বরাত দিয়ে মানিকন্ট্রোল নামের একটি নিউজ পোর্টাল শুক্রবার লিখেছে, বকেয়া দ্রুত পরিশোধের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে তারা। এ বিষয়ে অর্থলগ্নিকারীদের চাপে রয়েছে আদানি গ্রুপ।

আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে গত দুই বছর ধরেই ডলার নিয়ে চাপে আছে বাংলাদেশ। কমতে কমতে রিজার্ভ ঠেকেছে ২০ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে আইএমএফ এর কাছে আরো ৩ বিলিয়ন ডলার চাইতে যাচ্ছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আদানির বকেয়ার বিষয়ে বাংলাদশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, এখন শুধুমাত্র সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিল পরিশোধের চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সোনালী ব্যাংক ডলার সংকটে আছে। তাই আদানির বিদ্যুৎতের বিল বকেয়া পড়ছে। আমরা গভর্নরের সঙ্গে কথা বলছি, যদি সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে অন্য কোনো ব্যাংককে এই চুক্তির আওয়তায় আনা যায়, যাদের ডলার সরবরাহ ভালো রয়েছে। আরও এক-দুটি ব্যাংককে এ চুক্তির আওয়তায় আনার জন্য কথা বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, এসব সরকারি চুক্তির ডলার পরিশোধের দায়িত্ব যেসব ব্যাংকের সঙ্গে করা হয়, সেই সকল ব্যাংককে তা পরিশোধ করতে হয়। ব্যাংকগুলোকে রিজার্ভ থেকে আগে সহায়তা দেওয়া হত, কারণ তাদের ডলার সংকট ছিল।

বিদ্যুৎ কেনার জন্য আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এ চুক্তি করেছিল ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর। শেখ হাসিনার আমলে এ চুক্তি করার সময় সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেয়া হয়েছিল, বিনা বিনিয়োগে স্বল্পমূল্যে বা স্থানীয় বাজারমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। এর ফলে বিনিয়োগের ধকল পোহাতে হবে না, বরং অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে। চুক্তি হওয়ার পর ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডায় ২০২০ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন শুরু করে আদানি। কিন্তু সেই চুক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা বা তথ্যউপাত্ত বাংলাদেশের মানুষের হাতে ছিল না।

ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠীর নানা কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশের মধ্যে বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিটিও ফাঁস হয়ে যায়। সেখানে দেখা যায়, স্বল্পমূল্যে নয়, বরং স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি দামে বিদ্যুৎ আসবে আদানি থেকে। কয়লার দামও বেশি দিতে হবে। এ ছাড়া উৎপাদন না করলেও বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার।

সক্ষমতা থাকার পরও দেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে আদানির বিদ্যুৎ আমদানি করা নিয়ে সে সময় প্রশ্ন ওঠে। এ বিদ্যুৎ আমদানি করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের দেয়া তথ্যের সঙ্গে ফাঁস হওয়া চুক্তির তথ্য না মেলায় ব্যাপক সমালোচনা হয়।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইনের অধীনে যেসব চুক্তি হয়েছিল, সেগুলো পর্যালোচনার জন্য ইতোমধ্যে ৫ সদস্যের একটি কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Matribhumir Khobor

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ